ধারাবাহিক প্রতিবেদন-৪: উপকূলে জেগে উঠা চর নিয়ে নতুন স্বপ্ন
নিশান ডেক্স: মেঘনার মোহনায় হাতিয়ার উডিরচর ও সন্ধীপের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল জলরাশির বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন ভূমি। উপকূল ঘেঁষে জেগে ওঠা নতুন চরের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ জুড়ে এখন সবুজ ঘাসের সমারোহ। এর পরের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে জেগে উঠছে বিশাল চর। জোয়ারের সময় দেখা না গেলেও ভাটায় স্পষ্টভাবে এর অস্থিত্বের প্রমাণ মিলছে। যা দীর্ঘ সময় ধরে ভাঙন কবলিত দ্বীপের মানুষের মাঝে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। হাতিয়ার উপকূল ঘেঁষে দ্রুত জেগে উঠা চরের বিশাল অংশজুড়ে জন্ম নেওয়া ‘উরির’ সবুজ সমারোহ দেখে এলাকার মানুষের বুকে নতুন আশা জেগেছে। মেঘনার ভাঙনের কবলে কিংবা হুমকির মুখে যারা অন্যত্র ভাড়ায় কিংবা নতুন ঘর তৈরির চিন্তা ভাবনা করছিলেন তারা অনেকেই পুনরায় ফিরে আসছেন। যারা মেঘনার করালগ্রাসে বাপ-দাদার ভিটে মাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তাদের চোখে এখন আলোর ঝিলিক, হারানো ভূমি ফিরে পাবার দৃঢ় আশা।
স্থানীয় এলাকাবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় চর জেগে উঠেছে। এর আশে পাশে যেভাবে চর জেগে উঠছে তাতে সেদিন আর দূরে নয়, অচিরে আমরা উড়িরচরসহ কোম্পানিগঞ্জের সঙ্গে মিশে যাব। আরেক বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, ৬০ মৌজার ইতোমধ্যে কয়েকটি সাগর থেকে উদ্ধার হয়েছে। সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে খুব দ্রুত এ এলাকায় বিশাল ভূমি জেগে উঠবে। এছাড়া ষাটের দশকে জেগে উঠা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর। আবার দ্বীপের পশ্চিমে চর জাহাইজ্যা (স্বর্ণদ্বীপ), চর ক্যারিং, ঠ্যাংগার চর মিলে জেগে উঠা নতুন ভূমির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্ধীপের পশ্চিম উপকূলে নোয়াখালী, হাতিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম দিকে জেগে উঠা নতুন নতুন চরগুলোর আশে পাশে পলি জমে বিস্তৃত হয়ে সাগর মোহনায় সাংগু গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি চলে গেছে। দিন দিন এ চরের পরিধি শুধু বাড়ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫০ বছর ধরে মেঘনা মোহনায় ভূমি জাগরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ছয় লাখ হেক্টর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। কখনও প্রকৃতির আপন খেয়ালে আবার কখনও ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ সকল ভূমি উদ্ধার হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা সমীক্ষা-২০০১ এর মতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ হেক্টর ভূমি এ মোহনায় জেগে উঠছে। তবে বর্তমানে এ পরিমাণ আশাতীতভাবে বেড়ে চলছে। ১৯৫৭ সালে ১৩ কিলোমিটার ও ১৯৬৫ সালে ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে যথাক্রমে নোয়াখালীর রামগতিকে (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা) মূল ভূখন্ডের সঙ্গে এবং চর জব্বারকে সোনাপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। উভয় বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রায় এক লাখ হেক্টর ভূমি পুনরুদ্ধার হয়। সন্ধীপের তিন পাশে গড়ে উঠা নতুন চর ছাড়াও এর পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপ, চর কবিরা, চর কালাম, চর আলীম, চর সাগরিকা, উচখালী, নিউ ঢালচরসহ প্রায় ৫০০০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও চর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতে, উক্ত এলাকায় প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১৫-২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চরের সন্ধান মিলছে।