চাটখিলে সংখ্যালঘুকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
ইয়াকুব নবী ইমন, চাটখিলের বরইপাড়া থেকে ফিরে: নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের বরইপাড়া গ্রামে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমার দে’র পরিবারের একমাত্র সদস্য শিপ্রা রানীর দে’র উপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি প্রভাবশালী মহল শিপ্রা রানী দে’কে পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে। প্রভাবশালীরা ইতিমধ্যে তার হাটার জয়াগাটিও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে অনেকটা বন্ধি দশায় মানবেতর জীবন যাপন করছে শিপ্রা রানী। পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যার্য পাওয়া ফিরে পেতে শ্রিপ্রা রানী ও এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তপেক্ষপ কামনা করেছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমার ছিলেন বিপুল সম্পত্তির মালিক। এই সম্পত্তিই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সম্পত্তি গ্রাস করতে একটি মহল ১৯৭৮ সালে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমারের ঘরে ঢুকে চুরিকাঘাতে হত্যা করে। এর পর ১৯৮৯ সালে রবীন্দ্রের বড় ছেলে প্রদীপ কুমারও বাজার থেকে বাড়ি আসার পথের মধ্যে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। এই দুটি হত্যাকান্ডের পর রবীন্দ্র কুমারের পরিবারের সদস্যদের মাঝে নেমে আসে ঘোর আন্ধকার।
এরিমধ্যে ১৯৯৯ সালে এলাকার জনৈক আবদুল মালেক ও রুস্তম আলী রবীন্দ্র কুমারের ছোট ছেলে প্রবীর কুমারকে জিম্মি করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে তাকে জোর পূর্বক মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে রবীন্দ্র কুমারের সম্পত্তিগুলো দখল করতে থাকে। দখলে বাঁধা দেওয়ায় রবীদ্র কুমারের কন্যা শিপ্রার উপর নেমে আসে নির্যাতন। এনিয়ে ২০১৫ সালে শিপ্রা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করলে আদালত শিপ্রার অনুকুলে ৬০ একর সম্পত্তির রায় প্রদান করেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই মহলটির সেল্টারে ও সহযোগীতায় শিপ্রার ধর্মান্তরিত মুসলিম ভাই সাইফুল ইসলাম কৌশলে উক্ত জায়গা তার নামে দলিল করে নেয়। এরপর শিপ্রা রানীর উপর নির্যাতন আরও বৃদ্ধি পায়। নানা ভাবে ষড়যন্ত্র চলছে শিপ্রাকে পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের। বর্তমানে শিপ্রা অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সংস্কার করতে না পায় পিতার তৈরী অনেক দিন আগের ঘরটিও প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। আদালতের রায় পেয়েও পিতার সম্পত্তি ভোগ করতে পারছেনা শিপ্রা রানী। যে কোন সময় প্রভাবশালীরা শিপ্রা রানীকে হত্যা করে বাকি সম্পত্তিগুলোও দখল করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিপ্রা রানী।
ভূক্তভোগী অসহায় শিপ্রা রানী জানান, আমি আদালত থেকে রায় পেয়েছি, এরপও তারা আমার সম্পত্তি বুঝিয়ে না দিয়ে এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি নির্যাতিত, আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। আমি পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যার্য পাওয়া বুঝে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন তিনি যেন আমাদের পাশে দাঁড়ান।
শিপ্রা রানী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য জুয়েল পাটোয়ারী জানান, আমরা দীর্ঘদিনের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধটি সমাধানের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটি কুচক্রিমহলের কারণে সমাধানে আসতে পারিনি। এক সময় শিপ্র রানীদের অনেক কিছু ছিলো, তার পিতা এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগীতা করতেন আর এখন তার পরিবারের সদস্য শিপ্রা রানী নিজেই সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে ঘুরছে। তিনি বিষয়টি সমাধানে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সম্পত্তি দখল ও শিপ্রা রানীকে নির্যাতনের ব্যাপারে কথা বলতে শিপ্রায় ধর্মান্তরিত অভিযুক্ত মুসলিম ভাই সাইফুল ইসলামের ঘরে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সাইফুলের স্ত্রী নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা কাউকে নির্যাতন করিনি বরং শিপ্রা রানীসহ তার পালিত কিছু লোক আমাদেরকে নির্যাতন করছে। আমরাও চাই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধটি সমাধান হোক। এ জন্য কোন উদ্যেগ নিলে তারা সহযোগীতা করবেন বলেও জানান।
এমতাবস্থায় জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমারের ম্মৃতিচিহৃ বাড়ি ও সম্পত্তিগুলো রক্ষা করে একমাত্র সদস্য শিপ্রা রানীকে বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় এলাকাবাসীর।