ইয়াকুব নবী ইমন, কোম্পানীগঞ্জের চরাঞ্চল থেকে ফিরে:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আগাম তরমুজ চাষ করে লোকসানের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ফলন বিপর্যয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে।
২৫ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন। দীর্ঘদিন ধরে তরমুজ চাষাবাদে যুক্ত থাকলেও এবার আগাম তরমুজে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় হতাশ তিনি। এখন তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন।
জয়নাল আবদীনের মতো কৃষক মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেনসহ অনেক কৃষক নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ও বিভিন্ন চরাঞ্চলে পতিত জমিতে এবার আগাম তরমুজ চাষ করেছেন। কোম্পানীগঞ্জের উৎপাদিত এই তরমুজ চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় এবার লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তাই হতাশ কৃষকরা সরকারের সহযোগীতা চেয়েছেন।
সুবর্ণচর উপজেলার চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জয়নাল আবেদীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের পতিত জমি বর্গা নিয়ে ৫ বছর ধরে তরমুজ আবাদ করছেন।
জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে তরমুজ আবাদের সাথে জড়িত। কখনো এত লোকসানে পড়েননি তিনি। তিনি বলেন, তার জমিতে তরমুজের গাছগুলো খুব ভালো হয়েছে কিন্তু ফলন খারাপ হয়েছে। কেন ফলন খারাপ হলো তা তিনি বুঝতে পারছেননা। তবে আল্লাহ যদি সহায় হয় তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলন ভালো হলে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে জানান কৃষক জয়নাল।
কৃষক জয়নাল আবেদীন আরো জানান, ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। একর প্রতি খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু কিছু কিছু জমিতে একদম ফল নাই। এই ক্ষতি পুষিতে নিতে না পারলে ভবিষ্যতে তরমুজ চাষ করার সম্ভব নাও হতে পারে, বলেন কৃষক জয়নাল।
এদিকে একই এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তাদের মাঠে তরমুজ গাছের অবস্থা ভালো, কিন্তু ফলন ভালো না। আবহাওয়া খারাপ নাকি ওষুধ খারাপ তিনি তারা বুঝতেছেনা। কৃষি বিভাগ ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সকল ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গাছ হৃষ্টপুষ্ট কিন্তু ফলন নাই।
মুছাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করতে তার ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে । কিন্তু আশানুরূপ ফলন হয়নি। এমতাবস্থায় সরকারী সহযোগিতা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে জানায় কৃষকরা।
মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী জানান, আমাদের এখানে তরমুজ চাষ খুব ভালো হয়। আগামীতে ভালো আবাদ হবে বলে আমি আশাবাদী। লাভ- লোকসান মিলেই ব্যবসা। যদি কোনো কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েন তাহলে অনুরোধ করব কৃষি অফিস যেন তাদের পাশে থাকে। আমিও চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের পাশে থাকব।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. বেলাল হোসেন বলেন, উপজেলায় তরমুজ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। এ বছর কোম্পানীগঞ্জে ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০০ হেক্টর। তবে কেউ কেউ আগাম তরমুজ চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমি মনে করি আগাম চাষে ঝুঁকি ও লাভের সম্ভাবনা দুটোই থাকে।
তিনি আরো জানান, সুবর্ণচরের কৃষকের মাধ্যমে কোম্পানীগঞ্জে তরমুজ আবাদ শুরু হয়। ফলে দিন দিন আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। নিয়মিত চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সামনে রমজান আসছে এবং বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবননাও কম। তাই আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে তরমুজে লোকসান হবে না বলেও জানান উপজেলা কৃষি অফিসার বেলাল হোসেন। #
Leave a Reply