নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষ সন্ত্রাসী অনিক বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সম্প্রতি প্রকাশ্য দিবালোকে বাহিনী প্রধান অনিক ও তার ভাই তারেকের নেতৃত্বে হাসানহাট বাজারে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও দোকান ঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীরা অনিক ও তার বাহিনীর সদস্যদের কঠোর শাস্তির দাবী করেছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, শরীফপুর ইউনিয়নের বাবু নগর গ্রামের খুরশিদ আলমের বাড়ির শাহাদাত হোসেন ওরফেহক সাবের পুত্র শরাফত হোসেন অনিক(২৫) ও তার বড় ভাই আরাফাত হোসেন তারেক (২৩) এলাকার কিছু বখাটে যুবককে সাথে নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জবর দখল, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর এসব অপকর্মের কেউ প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্যাতন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বানিহীর সদস্য দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হয়। তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসা হিসেবে কাজ করছে। অনিক ও তারেকের রায়েছে কিশোর গ্যাং। এই গ্যাং-এ রয়েছে ৩০-৩৫ জনের সদস্য। অনিক ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়রী রয়েছে। অনিকের ছোট ভাই তারেক অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে একাধিবার গ্রেফতার হলেও জামিনে এসে পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।
গত ৬ মে প্রকাশ্য দিবালোকে হাসানহাট বাজারে বাবু নগর গ্রামের মজিব উল্যাহ মেম্বার বাড়ির ইলিয়াছ মিয়ার পুত্র শেখ আহম্মদের দোকানে হামলা, ভাংচুর, লুটপার ও জোর পূর্বক জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শেখ আহম্মেদ কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে অনিক, তার ছোট ভাই তারেক, তাদের সহযোগী ইমরাম হোসেন, রাকিব ও সোহেলের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারের আবেদন আবেদন করেন। একই ঘটনায় হেলাল উদ্দিন বাদি হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় অনিক ও তারেকসহ একাধিক হামলাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলায় পুলিশ হামলাকারী ওমর ফারুক রামিনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। এদিকে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ ও থানায় মামলা করায় বাদি ও স্বাক্ষীদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে অনিক বাহিনীর সদস্যরা। এতে ভূক্তভোগীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, অনিক বাহিনীর সদস্যরা সন্ধার পর এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে মোটর সাইকেল, টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এর আগে তুচ্ছ ঘটনায় কামাল নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে এই বাহিনীর সদস্যরা। ইতিপূর্বে হাসানা হাটে রায়হান রাকিব, আজিম ও দেলোয়ারের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে ও মাটি ভরাটের কাজ করা সরদার পাড়ার হেঞ্জু মিয়ার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে অনিক ও তারেকের নেতৃত্বে বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্র জানায়, শরীফপুর ইউনিয়নের হাসানহাট হচ্ছে সদরের নেয়াজপুর, কাদিরহানিফ, বেগমগঞ্জের একলাশপুর, কাদিরপুর ইউনিয়নের সীমান্তে। এখানে প্রতিদিন চার-পাঁচটি ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষ বাজার করতে আসে। অনিক ও তারেকের নেতৃত্বে গঠিত কিশোর গ্যাং-্এর সদস্যরা মানুষকে জিম্মি করে মোবাইল, টাকা, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ছিনতাই করে। অনেক সময় মানুষের কাছ থেকে মুক্তিপনও আদায় করে তারা। এই বাহিনীর সদস্যরা নাম্বার বিহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। এই মোটর সাইকেল দিয়ে মাদক ও অস্ত্র বহন করে বাহিনীর সদস্যরা। তাদের হাতে রয়েছে অবৈধ আগ্মেয়াস্ত্র। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এই বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসেনর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে এলাকায় গেলে অনিক ও তারেককে পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। অনিক ও তারেকের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply