নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর জানা গেছে মসজিদে ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ। তিনি বলেন, মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ছয়টি এসির প্রতিটির ক্যাচিং পুড়েছে কিন্তু ভেতরের সব ঠিক আছে। বিস্ফোরণ হয়েছে গ্যাসের ও বিদ্যুতের স্পার্ক থেকেই।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্যও পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, সিআইডি এবং ডিপিডিসির পক্ষ থেকে আলাদা পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা-এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বলে কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ অফিসের ডিজিএম মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে তিতাস গ্যাসের ঢাকা অফিসের মহাব্যবস্থাপক আবদুল ওহাবকে। শনিবার সকালে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন।
অপরদিকে ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ কে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ঘটনা তদন্তে কাজ করছে সিআইডির পাঁচ সদস্যের একটি দলও।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে এমন ধারণার পর থেকেই ওই এলাকার গ্যাস বন্ধ রেখেছে তিতাস। অভিযোগ আছে, মসজিদ কমিটি আগেই জানিয়েছিলো তিতাসকে গ্যাস লিকেজের কথা। কিন্তু দাবি করা ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ায় সেই লাইনটি ঠিক করেনি তিতাস। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দগ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন, বাকি ১৩ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
Leave a Reply