স্বাধীনতার ৫১ বছরেও অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্মস্থান
ইয়াকুব নবী ইমন:
স্বাধীনতার ৫১ বছরেও অবহেলিত রয়ে গেলো দেশের ৭ বীরশ্রেষ্ঠ এর একজন নোয়াখালীর বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্মস্থান। এই বীরশ্রেষ্ট এর জন্মস্থান সোনাইমুড়ীর রুহুল আমিন নগরে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ট মোহাম্মদ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘুরটি আধুনিকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও খুলনা থেকে সমাধি জন্মস্থানে স্থানান্তরের দাবী জানিয়েছে স্বজন, এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালের ২ ফ্রেব্রæয়ারি সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচরা গ্রােেম জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এ গ্রামের নাম রুহুল আমিন নগর। বাবা আজহার পাটোয়ারী ও মা জোলেখা খাতুনের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। আমিশাপাড়া কৃষি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে এসএসসি পাশ করে নাবিক হিসাবে নৌবাহিনীতে যোগ দেন। মেধা ও দক্ষতার জন্য তিনি জুনিয়র কমিশন অফিসার হিসাবে খুব দ্রæত পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে জানুয়ারিতে যুদ্ধকালীন সময়ে তাকে করাচি বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে না গিয়ে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশ নেন সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে। পরে কলকাতায় গিয়ে তিনি যোগ দেন নৌ-সেক্টরে। যুদ্ধ রণতরী পলাশের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আর্টিফিসার হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়ীত্ব পালন করা কালে খুলনার রূপসায় শত্রæ পক্ষের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। পরে তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। এর পর দীর্ঘদিন রুহুল আমিনের পরিবার অবহেলিত ছিলো। ২০০৭ সালে সেনা বাহিনীর প্রধান বাঘপাঁচরা গ্রামকে রুহুল আমিন নগর ঘোষনা ও বীরশ্রেষ্ট মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নামে একটি গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘুরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘুরটির অবস্থা এখন নাজুক। ভবনের বিভিন্ন স্থানে পাটল দেখা দিয়েছে। ইট, সুরকি খসে পড়ছে, ভেরতের লাইটগুলো নষ্ট, ফ্যান চলেনা। এতে এখনে দেখতে আসা দর্শনার্থীরা হতাশ। গ্রামের অভ্যন্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘুরটিতে নেই বাউন্ডারী ওয়াল, রয়েছে নিরাপত্তা সমস্যাও। সব মিলিয়ে আজো অবহেলিত এই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নিজ জন্মস্থান। এতে হতাশ এলাকাবাসী জানায়, নামে আমরা বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন নগরে বসবাস করছি। আমাদের এলাকা এখনো অনেক অবহেলিত। গ্রামের অধিকাংশ সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী। বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা।
এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমির প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবদীন জানান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় করণ হয়নি এখনো। তাই দ্রæত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় করনের দাবী জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ডিও লেটার দিলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় করণ এখন এলাকাবাসীর অন্যতম দাবী।
অপরদিকে খুলনা থেকে পিতার সমাধি জন্মস্থানে স্থানান্তরের দাবী জানিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পুত্র শওকত হোসেন বলেন, বাবার সমাধি খুলনা থেকে আনার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই বাবার সমাধী এখানে গ্রামের বাড়িতে আনলে উনার সম্মান যেমন বাড়বে এলাকাও উন্নত হবে।
এ ব্যাপারে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইসমাইল হোসেন জানান, এলাকাবাসী ও উনার পরিবারের সদস্যদের কয়েকটি দাবী দাওয়া রয়েছে। আমরা সেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সহসায় যাদুঘরটি আধুনিকায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়টিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
Leave a Reply