জাতীয় নিশান প্রতিবেদক: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোঃ রুহুল আমিনের ৫২ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়। রবিবার সকাল ১১টায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দুস্থ্যদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন। বীরশ্রেষ্ঠের দৌহিত্র ও স্মৃতি জাদুঘর সদস্য সচিব সোহেল চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন।উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ শাহিন মিয়া, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ভিপি বাহার। বক্তব্য রাখেন উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাষ্টার আবু ইউসুফ, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনের জৈষ্ঠ্য মেয়ে নুর জাহান বেগম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীরশ্রেষ্টের ভগ্নিপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট (অব.) আমির হোসেন, ছেলে শওকত আলীসহ তার পরিবারের সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় নৌ-উপদেষ্টা কমান্ডার এমএনআর সামন্ত সার্বিক তত্ত্বাবধানে হিরণ পয়েন্ট ১০ নং সেক্টরে মোংলা বন্দর এবং খুলনা খালিশপুরে পাকিস্তানি নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি পিএনএস তিতুমির দখলের উদ্দেশ্যে নেভাল জেটি হলদিয়া হতে পদ্মা ও পলাশ এবং ভারতীয় রণতরী পানভেল র্দীঘ পথ অতিক্রম করে ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টায় খুলনা শীপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌছায়। কিছুক্ষন পরেই বাংলাদেশের প্রথম নৌ-সেনারা বিজয়ের পতাকা উড়াতে বিজয় উল্লাস করবে খুলনা শীপইয়ার্ড জেটিতে। যার নেতৃত্ব দিবেন নোয়াখালীর বীর কৃতি সন্তান রুহুল আমিন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, হঠাৎ করেই হিরন পয়েন্টে ৩-৪টি জঙ্গি বোমারু বিমান তাদের নৌজাহাজের উপরে উড়তে দেখা যায়, পাক হানাদার বাহিনীর বোমারু বিমান বলে সকল নাবিকের ধারণা ছিল। ‘পদ্মা ও পলাশ থেকে নাবিকেরা বিমান গুলোকে লক্ষ করে গুলি করার জন্য অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরীর অনুমতি চান। তিনি সম্মতি না দিয়ে এ গুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু এরই ফাঁকে বিমান গুলো মহুর্তের মধ্যে গানবোট গুলোর উপুর্যপরি বোমা ফেললে ইঞ্জিন রুমে আগুন ধরে বিধ্বস্ত হয়। এতে বহু নাবিক হতাহত হলেন। গানবোট পলাশের ইঞ্জিনরুম তখনও সচল ছিল, কিন্তু অধিনায়ক রনতরি পরিত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার জন্য নাবিকদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু রুহুল আমিন গানবোট ত্যাগ করতে সম্মত না হয়ে তিনি পলাশ নৌজাহাজকে রক্ষা করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যান। ততক্ষনে বিমানগুলো পুনঃরায় উড়ে এসে বৃষ্টির মতো গোলা বর্ষণ শুরু করে। এ সময় রুহুল আমিনের ডান হাত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। এবং ইঞ্জিন রুমে আগুন ধরে গেল। রুহুল আমিন আগুন নিয়ন্ত্রনে প্রচেষ্টা চালিয়ে জাহাজটিকে ভাসমান রেখে শত্রুদের উপর আক্রমন করার চেষ্টা করেন। সে মুহুতে তিনি আবার বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন। দিশেহারা হয়ে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে কোন রকম পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। কিন্তু সেখানে অবস্থান রত পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। তাদের নির্মম অত্যাচারে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর তিনি শহীদ হন। ঘটনাস্থলে ৩ দিন তার লাশ পড়ে ছিল। শত্রুর ভয়ে কেউ লাশ উদ্ধার করতে সাহস করেনি। পরে স্থানীয় লোকজন জীবনের ঝুকি নিয়ে তার লাশ খুলনা রুপসা নদীর পাড়ে সমাহিত করেন।
Leave a Reply