জাতীয় নিশান প্রতিবেদক ঃ নোয়াখালীতে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর, নির্যাতন ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমর্থক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর থেকেই জেলার সদর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ীতে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় এখনো উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলাকারীদের চিহৃিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা।
মাইজদীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহিনের সংবাদ সম্মেলন:
মাইজদী থেকে জাতীয় নিশান প্রতিবেদক জানান, নোয়াখালী—৪ (সদর—সুবর্ণচর) আসনে নির্বাচন পরবর্তী শতাধিক কর্মী—সমর্থকদের মারধর ও পিটিয়ে আহত, বাড়িঘর—ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা, ভাংচুর ও তালা দেয়ার প্রতিবাদে এবং প্রায় ৪২জন প্রিসাইডিং কর্মকতার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ট্রাক প্রতীকের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট মো. শিহাব উদ্দিন শাহিন। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জেলা শহর মাইজদীর নিজ বাসভবন চেয়ারম্যান পার্কে এই সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে দলীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত থাকার কারণে আমি প্রার্থী হয়েছি। দল সিদ্ধান্ত না দিলে আমি প্রার্থী হতাম না। নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকেই নৌকার প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরীর নির্দেশে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ট্রাক প্রতীকের কর্মী—সমর্থকদের হুমকি, পোস্টার—লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা, অফিস ভাংচুর, হামলা, ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা ও আমার কর্মী—সমর্থকের অভিভাবকদের হুমকি দিয়ে আসছিল। এমন কি ভোটের আগের রাতে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের আশপাশে বোম বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটারদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, ভোটের দিন প্রায় ৪২জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নৌকার প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে পক্ষপাতমুলক দায়িত্ব পালন করেছেন। ওইদিন সকাল ১১ টার পর থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে জোরপুর্বক বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে ট্রাক প্রতীকের কর্মী সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খুরশিদ হাজারী, চরক্লার্কের হানিফ মেম্বার, চর ওয়াপদা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা সবুর খান, সুবর্ণচরের সাহাব উদ্দিন মেম্বার, জুয়েল, মো. হাসান, সাহাব উদ্দিন, মোবারক হোসেন, সামছুদ্দিন, সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জাহেদুল ইসলাম পারভেজ, ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার খুকি, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফারুক, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মাহমুদুর নবী রায়হান, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম কালাম, সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী, কালাদরাপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বিডিবি শাহ আলম, ইউনিয়ন ছাত্র লীগের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হোসেন, ব্যবসায়ী আবু তাহের ও তার স্ত্রী, দাদপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী ও ছেলে, যুবলীগ নেতা শামীম, খলিল, সমর্থক সেলিম, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নুরুল আমিন’সহ প্রায় শতাধিক কর্মী—সমর্থককে মারধর ও পিটিয়ে আহত, তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালিয়েছে জয়ী প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরীর সন্ত্রাসীরা। তারা অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে, আমার কর্মী—সমর্থকদের বাড়িঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। এভাবে দলের ত্যাগী নেতা—কর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকলে তারা দল বিমুখ হওয়াসহ দল থেকে নিষি্ক্রয় হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
শাহিন আরো বলেন, খরস্রোতা নদীকে খনিকের কিছু বাঁধ দিয়ে হয়তো বা নদীর গতিপথকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু কখনোই ওই নদীর প্রভাহকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়া যায়না। আমিও রাজনীতি থেকে থেমে যাবো না। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসনিার নেতৃত্বে আমার গতিপথ অব্যাহত রাখবো। জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপুর্বক বিচার দাবি করেন শাহিন।
সেনবাগ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের মার্কেট ভাংচুর
সেনবাগ থেকে নিশান প্রতিবদেক জানান, নোয়াখালীর সেনবাগে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় উপজেলায় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিকের মালিকানাধীন জাহাঙ্গীর আলম কমপ্লেক্সেএ ভাংছুর করেছে একদল দুবৃত্ত। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ছমির মুন্সিরহাট পশ্চিম বাজারে জাহাঙ্গীর আলম কমপ্লেক্স নামক ওই মার্কেটে ভাংচুরের ঘটনাটি ঘটেছে।
লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক সেনবাগ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি নোয়াখালী—২ (সেনবাগ—সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র (কাঁচি) মার্কার প্রার্থী বাফুকের সহসভাপতি ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকে পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করেছিলেন। রাতে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার পর একদল দুবৃত্ত তার মার্কেটে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মার্কেটের প্রবেশ গেইট ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মার্কেটের সৌন্দর্য বর্ধণ মার্কারী কাঁচ ভাংচুর করে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মোঃ জোবায়ের (২৫), খোরশেদ আলম (২৬),অমিত হাসান ((১৯),মোঃ স্বপন (২৪), মোঃ সোহাগ (২৫), মোঃ নুরনবী প্রকাশ রবিন (২২), কিশোর চর্মকার (১৮) সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের উল্লেখ করে সেনবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ঘটনার জন্য লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক নৌকার প্রার্থী এমপি মোরশেদ আলমকে দায়ী করেছেন। তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষিদের বিচার দাবী করেন এবং দলের হাই কমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
নোয়াখালী—২ (সেনবাগ—সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র (কাঁচি) মার্কার প্রার্থী বাফুকের সহ সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বলেন, এটা খুবই নিন্দনিয় কাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের দলের সাধারণ সম্পদাক ওয়াবদুল কাদের সাহেব বলেছেন, যে কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন এবং কোন দলীয় নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবেনা। সেই হিসেবে অনেকে আমার ভোট করেছেন, এখন মোরশেদ আলম সাহেবের লোকজন আমার কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘরে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে। বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আমার অনেক কর্মী সমর্থক এলাকা ছাড়া। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের বিচার দাবী করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য নৌকা মার্কার বিজয়ী প্রার্থী মোরশেদ আলম এমপির মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে যোগাযোগ করা হলে সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সোমবার বিকেলে জানান, এঘটনায় লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিকের ছোট ভাই সানজী গ্রুপের পরিচালক ফিরোজ আলম খোকন ৭জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের নাম উল্লেখ্য করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিগত দুই দিন বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও চৌমুহনী শহরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। গতকাল বুধবার দুপুরে চৌমুহনী শহরের পূর্ব বাজার মদন মোহন স্কুলের সমনে কয়েকটি ককটেল বিষ্ফোনের ঘটনা ঘটে। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সচেতন মহল মনে করছেন, নির্বাচন এসেছে নির্বাচন চলে গেছে। এখন যেন পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকে, যে কোন অপরাধ কঠোর হাতে দমন করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তারা।
এ সব বিষয়ে বুধবার সন্ধায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিপিএম, পিপএম জানান, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসলে আমরা সাথে সাথেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। সদরে নির্বচানী সহিংসতার বিষয়ে এখনো কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। সেনবাগের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবেনা। এছাড়া জেলার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিত স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
Leave a Reply