জাতীয় নিশান প্রতিবেদক: নোয়াখালীর সদর উপজেলায় রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনে আহত এক যুবলীগ নেতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত আরো ৩ জনকে পুলিশ পাহারায় বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে, ওই যুবককে রশি দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় বেধড়ক পেটানোর ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে। অপর দিকে নিহতের পরিবারের স্বজনরা, এই ঘটনার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ফয়সাল বারি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। এদিকে গনপিটুনি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সুধারাম থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গনপিটুনির ঘটনায় স্থানীয় চৌকিদার অজ্ঞাতনামা ৮/৯শ লোকের বিরুদ্ধে এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদিকে ১৯নং চরমটুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সাল বারি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নহে। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও যৌথবাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা এসেছে। আমি যাওয়ার আগে কি ঘটেছে জানি না। আমি যাওয়ার পরে একটা লোক ও তার গায়ে হাত দেয়নি। আমার ইউনিয়নে এত বড় ঘটনা ঘটেছে, এর দায়ভার তো আমার দিকে যাবে। যেহেতু সে আমার এন্টি পার্টি। নিহত শহীদ ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও একজন গরু ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন থেকে গরু ব্যবসা করে আসছে।
গনপিটুনি ঘটনার পর সন্ধ্যায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গণপিটুনিতে গুরুতর আহত মোঃ আবদুর শহীদ শনিবার রাত ৮ টায় মারা যান। চর মটুয়া গ্রামের মমিনুল্লাহ মুন্সির ছেলে।
নিহত সহিদের পরিবার ও আহতদের স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় ১৯ নং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সাল বারির নেতৃত্বে অনেক লোক একই দিন দুপুরে শনিবার আড়াইটার দিকে উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের সূর্যনারায়ন এলাকার ইসমাইল মুহুরীর বাড়ি থেকে সহিদ সহ ৪ যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলে রাত ৮ টায় শহীদের মৃত্যু হয়। অপর তিনজনকে মো.জামাল হোসেন (৪২) মো.জাবেদ (২৮) ও মো.রিয়াদ হোসেন (৩৬) কে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে।
অপরদিকে, নিহত যুবক মো. আব্দুস শহীদকে পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য বলে দাবী করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম। স্থানীয় একটি সূত্রে জানায়, দীর্ঘদিন থেকে চেয়ারম্যানের সাথে দ্বন্ধ ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ ইব্রাহিম তিনি বলেন, গতকাল আড়াইটার দিকে উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল মুহুরী বাড়িতে স্থানীয় জনতা কয়েকজন যুবককে গণপিটুনি দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যৌথ বাহিনী উপস্থিত হয়ে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শব্দের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদের মধ্যে শহীদ নামে একজন নিহত হন, ওপর তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উক্ত বিষয়ে অস্ত্র আইনে ও গণপিটুনি আলাদা আলাদা দুটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ চলমান বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির লোকজন এ ঘটনায় জড়িত কথাটা ঠিক নয়। সে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছিল। স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে মারধর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গণপিটুনি ও অস্ত্রের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে এবং তিনজন পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিহত শহীদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। নিহত শহীদের হাত-পা বাঁধা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা দেখেছি। চেয়ারম্যান এ ঘটনার সাথে জড়িত আছে কি না, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply