
সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে আনোয়ার হোসেন রাজু:
সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মামসহ বড় শহরগুলোতে কিছু বাংলাদেশি প্রবাসীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কাজ সংগ্রহ করে দেয়ার নামে কিছু ভুয়া কোম্পানির অফিস খুলে প্রতারণা, মাদক, অপহরন ও নারী ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছেন এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এদেশের জেলে আছেন। আবার অনেককেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্তরা বড় শহরগুলোতে যেমন রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মামে বড় বড় ভুয়া অফিস খুলে চাকরির সুযোগ এবং বিভিন্ন সুবিধার প্রলোভন দেখাত। প্রবাসীরা তাদেরকে বিশ্বাস করে টাকা জমা দিত বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করত। অনেক সময় এসব প্রতারণার সঙ্গে অপহরণের ঘটনাও জড়িয়ে যেত। এর ফলে অসংখ্য মানুষ প্রতারিত এবং কেউ কেউ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে।
রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট সৌদি পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। দূতাবাস ও কনস্যুলেট জানিয়েছে, তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বহু অভিযোগ পেয়েছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে।
জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছে, এ ধরনের প্রতারণা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং নিরীহ প্রবাসীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের সতর্ক করে বলেছে, কোনোভাবেই তারা যেন অবৈধ বা অপরাধমূলক কাজে না জড়ান। কয়েকজনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে লাখ লাখ পরিশ্রমী ও সৎ বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছে। যাদের কঠোর পরিশ্রম দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। অপরাধে জড়িয়ে পড়লে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, গোটা দেশের শ্রমবাজারের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেবল সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ইউএস ডলার। যদি সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশিদের প্রতি আস্থা হারায় এবং শ্রমিক নিয়োগ সীমিত করে, তাহলে সরাসরি এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। চাকরির বাজার সংকুচিত হলে হাজারো পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। তাই প্রতিটি প্রবাসীর উচিত ব্যক্তিগত আচরণের মাধ্যমে দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা।
সৌদি আরবের পুলিশ ইতিমধ্যে কয়েকটি চক্রকে শনাক্ত করেছে। যেসব বাংলাদেশি অপরাধে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। প্রমাণিত অপরাধীদের সাজা শেষে বহিষ্কার করে আজীবনের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন।
সচেতন প্রবাসী মহল মনে করেন বিগত ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পালানোর পরপরই সৌদি আরবের ভিসা সহজলভ্য হওয়ার কারণে বিগত সরকারের অসংখ্য নেতাকর্মী নিজেকে বাঁচানোর জন্য সৌদি আরবের পাড়ি জমিয়েছে । এবং এরাই এদেশে বসে দেশীয় স্টাইলে বিভিন্ন রকম অপরাধ , অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ।
প্রবাসী কমিউনিটি নেতারা মনে করেন, প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব। কয়েকজনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে গোটা কমিউনিটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা দেশের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই প্রবাসীদের সৎভাবে কাজ করা, আইন মেনে চলা এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কেবল শ্রমিক নয়, তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের সততা, পরিশ্রম এবং আইন মেনে চলার মধ্য দিয়েই প্রবাসী সমাজের ইতিবাচক চিত্র গড়ে উঠবে। সরকারের আহ্বান, সবাই যেন সতর্ক থাকে এবং দেশের সুনাম রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
কমিউনিটি নেতারা এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিভাগের আরো খবর....